পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় একটি সুসংগঠিত চক্র হাইকোর্টের একটি আদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাপক আকারে অবৈধ বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে।ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বাধীন এই চক্রের তৎপরতায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা হার্ডিং ব্রিজ,লালন শাহ সেতু এবং মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
‘আদেশের অপব্যাখ্যা’দিয়ে লুটপাট
স্থানীয় সূত্র ও ভিডিও প্রমাণে জানা গেছে,জাকারিয়া পিন্টু(কারামুক্তির পর)তার ভাই মেহেদী হাসান, আত্মীয় সোনামণি,সাবেক যুবদল নেতা সুলতান আহমেদ টনি বিশ্বাস এবংআওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কুষ্টিয়ার‘বালি সাঈদ’(সাঈদ খান)-কে নিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছে।তারা একটি পুরনো হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশকেভুলভাবে‘বালু উত্তোলনের লাইসেন্স’হিসেবে উপস্থাপন করলেও,পরিবেশ আইন ও নদী খননের সরকারি বিধিনিষেধকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছে।
“এই আদেশ শুধু নির্দিষ্ট মামলার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছিল,কখনোই বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা নদী উজাড় করছে,”- বলেন একজন স্থানীয় পরিবেশ কর্মী(নাম গোপন রাখার শর্তে জানাই)।
মেগা প্রকল্প ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে
এই অবৈধ উত্তোলনের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে পদ্মার তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক**হার্ডিং ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর ভিত্তির ওপর।পরিবেশবিদ ও প্রকৌশলীরা সতর্ক করছেন:
ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু তুলে নেওয়ায় পদ্মার স্বাভাবিক গতিপথ বদলে যাচ্ছে।
এর ফলে ব্রিজের পাইলিং দুর্বল হওয়া,এমনকি ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিপদ আরও কাছাকাছি:অবৈধ সাইট থেকে মাত্র ৩/৪কিলোমিটার** দূরেই অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।এর ভিত্তির স্থায়িত্বও হুমকির মুখে।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা,রাজনৈতিক ছত্রছায়া
গত সপ্তাহে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর ঈশ্বরদী প্রশাসন ক্ষণিকের জন্য অভিযান চালিয়ে উত্তোলন বন্ধ করলেও,৩ জুলাই সকালেই চক্রটি ফের সক্রিয় হয়।
“ওদের পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে। নির্দেশ না পেলে আমরা কিছুই করতে পারি না,”- স্বীকার করেন ঈশ্বরদীর এক পুলিশ কর্মকর্তা(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন জানায়)।
স্থানীয়ও অভিযোগ করে বলেন
*জাকারিয়া পিন্টু বিএনপির রাজনীতির পাশাপাশি বালু, গাছপালা,ঠিকাদারি ও পরিবহন চাঁদাবাজির সাথে জড়িত।
আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট‘বালি সাঈদ’-এর সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ চক্রটিকে প্রশাসনিক চাপ থেকে রক্ষা করছে।
প্রতিবাদকারী বা সাংবাদিকদের হুমকি-ভীতি প্রদর্শন ও মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।
জনজীবনে আতঙ্ক,দাবি জোরালো
“নদী যাবে,সেতু যাবে,তারপর আমাদের ঘরবাড়ি…চোখের সামনে সব ধ্বংস হচ্ছে,কিন্তু প্রতিবাদ করলেই হামলার ভয়,”- আক্ষেপ করেন সাড়াঘাটের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।
এই পরিস্থিতিতে জনগণের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি:
অবিলম্বে বন্ধ হোক,পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন।জাকারিয়া পিন্টু, ‘বালি সাঈদ’ও তাদের চক্রের সকল সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ।
* হার্ডিং ব্রিজ,লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ভৌত ও পরিবেশগত নিরাপত্তা জরুরি ভিত্তিতে নিশ্চিতকরণ। নাটোরের লালপুরের মতো বৈধ বালুমহলগুলোর কার্যক্রম সুরক্ষা ও প্রাধান্য দেওয়া।
*অবৈধ কার্যক্রমে**জড়িত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিতকরণ ও বিচার আওতায় আনতে হবে।
এলাকাবাসী দাবি জরুরি হস্তক্ষেপ চাই,পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় চলমান অবৈধ বালু উত্তোলন কেবল পরিবেশের জন্য হুমকি নয়;এটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ওজাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিতৈরি করেছে।প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই চক্রের দাপট অব্যাহত থাকলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।সরকারের উচ্চপর্যায়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়,নদী রক্ষা কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরতাৎক্ষণিক ও কার্যকর হস্তক্ষেপইকেবল পদ্মাকে,জাতীয় সম্পদকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তাকে রক্ষা করতে পারে।
তবে এবার আসার খবর হচ্ছে,চর লাগানোর পরে আজকে এই শরীর লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে তা বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গেছে।